ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সমর্থন প্রসঙ্গে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ইস্যুতে রাজ্যের পাঁচ সংখ্যালঘু মন্ত্রীকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একইসঙ্গে ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত।
‘ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ’ প্রসঙ্গে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা তামিম সিদ্দিকি বলেছেন, ‘ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ হয়েছে শুনেছি। কিন্তু উন্নয়ন পর্ষদের কাজকর্মের ক্ষেত্রে ফুরফুরার পীরজাদাদের নিয়ে কোনও মিটিং বা আলোচনাসভা আমার জানা মতে এখনও পর্যন্ত হয়নি। আমরা উন্নয়ন পর্ষদ থেকে এখনও পর্যন্ত ডাক পাইনি। শুনেছি ফিরহাদ হাকিম সাহেবকে পরিবর্তন করে তপন দাশগুপ্ত এসেছেন। দেখা যাক তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন কী না।’ পীরজাদা তামিম সিদ্দিকির মতো অন্য বেশ কিছু পীরজাদাও রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক বিভিন্ন তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মুসলিমদের মধ্যে ফুরফুরা শরীফের বড় প্রভাব থাকায় রাজ্য সরকার মুসলিম ভোট নিয়ে যে উদ্বিগ্ন তা স্পষ্ট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরই মধ্যে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রীকে দ্রুত কাজে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। গত (সোমবার) বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। এ সময়ে সংখ্যালঘু পাঁচ নেতাকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান মমতা। গ্রন্থাগার দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান, সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী গোলাম রাব্বানী ও জঙ্গিপুরের মন্ত্রী জাভেদ খান তার ঘরে যান। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এদেরকে সম্প্রতি মুসলিম অধ্যুষিত সাগরদিঘি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিপর্যয় নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। এরপরেই গতকাল (মঙ্গলবার) ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। তার জায়গায় নয়া দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হুগলি জেলা তৃণমূলের নেতা ও বিধায়ক তপন দাশগুপ্তকে।
সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত সাগররদিঘি উপনির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের পরাজয়ের পরেই গুঞ্জন উঠেছে, সংখ্যালঘুরা শাসকদলের পাশ থেকে সরে যেতে শুরু করেছে। যে কারণে গত সোমবার বিধানসভায় ৫ জন নেতাকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যারা সাগরদিঘির পাশাপাশি রাজ্যের ‘সংখ্যালঘু ভোটের অবস্থা’ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দেবেন।
কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘একটা উপনির্বাচন নিয়ে তিন বিরোধী লাফালাফি করছে। ওরা তিনটি দল এক হয়ে এক জায়গায় ভোট ট্রান্সফার করেছে। বিজেপির এ-টিম হল কংগ্রেস, বি-টিম হল সিপিএম, আর সি-টিম হল কিছু ‘ধর্মীয় ধ্বজা নিয়ে আন্দোলন করা সংগঠন’। তার আরও অভিযোগ, ওদের মধ্যে কিছু লেনদেন আছে। কী লেনদেন আছে সেটা বলছি না! ওটা আমি দিতে পারব না! টাকা নিয়ে আমি রাজনীতি করি না। আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি।’
বর্তমানে ফুরফুরা শরিফের একাংশের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কারণ ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা ‘আইএসএফ’ চেয়ারম্যান বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে সম্প্রতি ৪২ দিন জেলে থাকতে হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি কোলকাতার ধর্মতলায় দলটির প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোলকাতা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আইএসএফ সমর্থকদের। সেই ঘটনার জেরে নওশাদ সিদ্দিকিসহ ৮৮ জন আইএসএফ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত (বৃহস্পতিবার) তার জামিন ম়ঞ্জুর হলেও গত (শনিবার) মুক্তি পান তিনি। তার ৪২ দিন কারবাসের কারণে ফুরফুরার একাংশ রাজ্য সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। তার প্রভাব পড়েছে মুসলিমদের মধ্যেও। সম্প্রতি স্থানীয় বিধায়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে, দেখা হয়নি তাদের।
Leave a Reply