কাতারের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার পর সেদেশের আমির নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন। কাতারের আদালত ঘোষণা করেছে যে কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামদ আল থানি এই দেশের প্রধানমন্ত্রী খালিদ বিন খলিফা বিন আবদুল আজিজ আল থানির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। খালেদ বিন খলিফা ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন এবং মাত্র তিন বছর পর তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
কাতারের আমির তার আরেকটি নির্দেশে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আলে থানিকে তার পদে বহাল রেখেই নতুন প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্বও তার কাছে অর্পণ করেছেন। মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আলে থানি যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীত্বের পাশাপাশি উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করতেন।
যাইহোক, নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এবং ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছিলেন। কাতারের আমিরের আরেকটি নির্দেশ রয়েছে তার ভাইয়ের বিষয়ে। কাতারে সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের একই সময়ে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করতে হয়। কিন্তু এবারই কাতারের আমির নতুন একজনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর নিজের ভাই খলিফা বিন হামদ বিন খলিফা আলে থানিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ক্ষমতার বিন্যাসে নতুন পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে সেদেশের বর্তমান আমির এবং সাবেক আমির ও তারই পিতা শেইখ হামদ বিন খলিফার অন্য সন্তানদের অবস্থান সুসংহত করা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কাতারের আমির শেখ তামিমের উপস্থিতিতে সে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আলে থানি এমন সময় শপথ নিলেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করলেন যখন তিনি কাতারের ক্ষমতার কাঠামোতে মধ্যপন্থী ও বাস্তববাদী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বরাবরই এ অঞ্চলের দেশগুলোকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি কাতারের পররাষ্ট্র নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই অঞ্চলে কাতারের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি উপস্থাপনের পাশাপাশি আঞ্চলিক উত্তেজনা ও সংকট নিরসনে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন ও আমিরাতের সাথে যখন কাতারের উত্তেজনা শুরু হয় এবং ওই চারটি দেশ কাতারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তখন মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আলে থানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এই সংকটকালীন সময়ে তিনি কাতারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং সৌদি আধিপত্যের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। সাড়ে তিন বছর ধরে চলা ওই কঠিন সময়ে তিনি কাতারের স্বার্থ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই কঠিন সময়ে ইরান কাতারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এবং ইরানের সহযোগিতার কারণে ওই চারটি দেশের স্থল ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কাতারকে কাবু করতে পারেনি। ইরান কাতারের জন্য তার আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল এবং যাবতীয় খাদ্যপণ্য সরবরাহ করেছিল। এ অবস্থায় মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান পররাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রী উভয় দায়িত্বে নিযুক্ত হওয়ায় তেহরান-দোহা সম্পর্ক আরো মজবুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Leave a Reply